স্বল্প আয়ে সংসারের চাপ সামলাবেন যেভাবে

 প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে জিনিস পত্রের দাম। এক সপ্তাহ আগে যে বাজেট নিয়ে বাজার করতে গিয়েছিলেন পরের সপ্তাহে গিয়ে দেখলেন বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। কিন্তু বাজার তো করতেই হবে তাই. . . .না? নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ছাড়া সংসার চালানতো সম্ভব না। তাই একটি নির্দিষ্ট উপার্জনে কিভাবে সারা মাস সংসারের সব প্রয়োজন মেটাবেন তার জন্য থাকতে হবে সঠিক পরিকল্পনা।


আমাদের ব্যায় যেভাবে বাড়ে সেভাবে কিন্তু আয় বাড়ে না। এখন কথা হচ্ছে, আয় না বাড়লেও কিভাবে খরচের লাগাম টেনে ধরে ব্যায় কমাতে হবে তার জন্য দরকার উত্তম বাজেট। ধরুন আপনি একজন চাকরিজীবী, মাসে একটা বাঁধা পরিমান অর্থই আপনার ঘরে আসে। তাহলে সংসারের অসীম চাহিদা পূরণ করবেন কিভাবে? চিন্তার কোন কারণ নেই।হাতের কাছে কাগজ কলম নিয়ে বসে পড়ুন। লিখে ফেলুন আপনার চাহিদার তালিকা। কোন জিনিস কি পরিমান লাগবে, কোনটা এই মাসে না কিনে পরের মাসে কিনলেও চলবে তা খুঁজে বের করুণ। 

আপনি তালিকাটি করতে পারেন এইভাবেঃ

  • বাসা ভাড়া
  • বিভিন্ন ধরনের বিল; যেমন পানি, বিদ্যুত, গাস, পেপার, ইন্টারনেট, মোবাইল কল ইত্যাদি।
  •  প্রসাধন সামগ্রী
  • মুদিখানা
  • কাঁচা বাজার
  • জরুরী ঔষধ
  • পোশাক পরিচ্ছদ
  • যাতায়াত
  • ইমারজেন্সি ব্যালেন্স
  • অন্যান্য
  • সঞ্চয়
বিভিন্ন ধরনের বিলঃ
  • একটি বাসার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস হল পানি। পানির কোন বিকল্প নেই। তাই নিরবিচ্ছিন্ন পানি পেতে পানির ব্যাবহারে সচেতনতা দরকার। সময়মত পানির বিল পরিশোধ করলে অহেতুক ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পানির অপচয় রোধে কাজ শেষে পানির কল বন্ধ রাখতে হবে। 

  • এরপরে আসে বিদ্যুত।বিদ্যুত আমাদের জাতীয় সম্পদ। এর ব্যাবহারে সর্বাত্মক সচেতনতা জরুরী। বিনা প্রয়োজনে লাইট ফ্যান জ্বালাবেন না, এসি চালাবেন না। আপনার কাজ শেষে বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ করুন। খরচ কমান।

  • গ্যাসের অপচয় রোধ করতে রান্না করার আগে সবকিছু কেটে কুটে রেডি করে নিন। একবারে চুলা জ্বালান। সম্ভব হলে দুই বেলার রান্না একসাথে করে নিন। 

  •  অনেক বাসা বাড়িতে পেপার পড়ার চল থাকে। এর জন্য একটা নির্দিষ্ট বিল দিতে হয়। তাই পুরনো খবরের কাগজ এলোমেলো ভাবে ফেলে না রেখে গুছিয়ে রাখুন। মাস শেষে বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রির টাকা দিয়ে ঘরের কোন শৌখিন জিনিস কিনতে পারবেন।

  • অনেক বাসা বাড়িতে একাধিক পরিবারের সদস্য থাকেন। তাই জনে জনে ইন্টারনেট না কিনে একসাথে একটি ওয়াইফাই সংযোগ ব্যাবহার করুন।
  • মোবাইল কলের মাধ্যমে অনেক টাকা চলে যায় তাই কিছু মিনিট প্যাক ব্যাবহার করতে পারেন। এতে বাড়তি খরচ কমে যায়।
প্রসাধন সামগ্রীঃ
ব্যাক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যাক্তিত্ত প্রকাশে আমরা বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী ব্যাবহার করে থাকি। এইসব প্রসাধনী কেনার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাই কেনাকাটার আগে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অপ্রয়োজনীয় কিছু হুট করেই কিনে না ফেলি। যতটুকু লাগবে তার বাইরে গিয়ে কোন কিছু যেন না কিনি। যেমন সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট, হ্যান্ডওয়াশ, সানস্ক্রিন প্রতিদিন ব্যাবহার করতে হয় তাই এগুলো কেনা জরুরি। কিন্তু মেকআপের জিনিস জরুরী নয়।
মুদিখানাঃ
চাল -ডাল,তেল -লবন, আটা -ময়দা, বিভিন্ন ধরনের মশলা আমরা মুদিখানা থেকে কিনে থাকি। একসাথে সব বাজার করলে দামে কিছু টা কম পাওয়া যায়। পুরো মাসের বাজার একত্রে করার চেষ্টা করবেন। এতে করে বারবার বাজারে যাওয়ার তাড়া থাকবেনা। অনেক কয় দিন নিশ্চিন্তে থাকবেন। যেমন তেলের বড় বোতল কিনলে লিটারে কিছু টাকা কম পাওয়া যায়।
কাঁচা বাজারঃ
সুপার শপ থেকে না কিনে কাঁচা বাজার থেকে ফলমূল, শাকসবজি কিনবেন। এগুলো ফ্রিজে রেখে দিলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত তাজা থাকে। আবার রান্না করা খাবার রেখে দিলে দুই থেকে চারদিন পর্যন্ত ভাল থাকে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, একবারে কিনে ডিপ ফ্রিজে ১ মাসের জন্য সংরক্ষন করবেন। এতে প্রতিদিনের রান্নার জন্য টেনশন করতে হবে না। 
জরুরী ঔষধ
পরিবারের কিছু সদ্যসের জন্য নিয়মিত ওষুধ কিনতে হয়। চেষ্টা করবেন একমাসের সব ওষুধ একত্রে কেনার। এতে করে প্রতিদিনের সব ওষুধের ডোজ ঠিক থাকবে। বড় ফার্মেসী থেকে ওষুধ কেনার চেষ্টা করবেন এতে করে আপনার প্রেস্ক্রিপ্সান এর সব ওষুধ এক জাইগায় পেয়ে যাবেন।অনেক দোকান ঘুরে ঘুরে ওষুধ কেনা বিড়ম্বনার।


বাসা ভাড়াঃ

 আপনার আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ চলে যাই আবাসন খাতে । হতে পারে এটিই আপনার সবচেয়ে বেশি খরচের জায়গা। তাই বেতন পাবার পরে প্রথমেই এই টাকাটা আলাদা করে রাখুন। চাকরির প্রয়োজনে আপনাকে হয়তো ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে এই কারনে বাড়িওয়ালার সাথে অহেতুক ঝামেলা এড়াতে বাসা ভাড়া টা আগে পরিশোধ করুন। দেখবেন মানসিকভাবে আপনি অনেকটা নির্ভার হয়ে গেছেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

; আহনাফআদিল আলট্রার

comment url